শহীদ ডাঃ এ এফ এম আবদুল আলীম চৌধুরী (পুরো নাম: আবুল ফয়েজ মোহাম্মদ আবদুল আলীম চৌধুরী) ছিলেন চিকিৎসক ও বুদ্ধিজীবী। ১৯৭১ সালের ১৫ই ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে চারটায় শহীদ ডাঃ আবদুল আলীম চৌধুরীকে রাজাকার-আলবদর বাহিনী তার বাসা থেকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায় এবং সারারাত নির্যাতনের পর ভোররাতে মেরে ফেলা হয়।এরপর ১৮ ডিসেম্বর রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে ডা.আবদুল আলীমের ক্ষত-বিক্ষত লাশটির সন্ধান পাওয়া যায়।
আব্দুল আলিম চৌধুরী কিশোরগঞ্জ জেলার খয়েরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কিশোরগঞ্জ হাই স্কুল থেকে ১৯৪৪ সালে মেট্রিক এবং কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে আইএসসি পাশ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৫ সালে এই কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং ১৯৬১ সালে লন্ডন থেকে ডিও ডিগ্রী লাভ করেন। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি বাম রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং ৫২-র ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি দেশে থেকেই বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন। তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মেডিকেল এসোসিয়েশন গঠনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন এবং এই এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি ‘যাত্রিক’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা বের করতেন।
পেশাগত জীবনে আবদুল আলীম চৌধুরী ১৯৬১ থেকে ১৯৬৩ পর্যন্ত লন্ডনের সেন্ট জেমস হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ছিলেন। এরপর দেশে ফিরে ১৯৬৩ সালের শেষের দিকে তিনি মীর্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে যোগ দেন প্রধান চক্ষু চিকিত্সক হিসেবে। ঢাকার পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন তিনি ১৯৬৭ সালে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন ১৯৬৮ সালে। এরপর কিছুদিন ছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগে। তার সর্বশেষ কর্মস্থল ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ। ছবি তোলা ও লেখালেখির শখ ছিল আবদুল আলীম চৌধুরীর। ছাত্রজীবনে ‘খাপছাড়া’ ও ‘যাত্রিক’ নামে দুটি প্রগতিশীল মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। ছাত্র থাকাকালেই তিনি ‘দৈনিক ইত্তেহাদ’ ও ‘দৈনিক মিল্লাত’ পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন।