দেলোয়ার হোসেন (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।
দেলোয়ার হোসেনের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার হুগলি (পাটোয়ারী বাড়ি) গ্রামে। তার বাবার নাম মো. ওয়াজেদ আলী পাটোয়ারী এবং মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম জাহানারা বেগম। তাঁদের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে।
দেলোয়ার হোসেন চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রাম সেক্টরের অধীন ১১ উইংয়ের (বর্তমানে ব্যাটালিয়ন) হেডকোয়ার্টার কোম্পানিতে। এর অবস্থান ছিল হালিশহরে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। হালিশহর, পাহাড়তলি, কালুরঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে বৃহত্তর সিলেট জেলা মুক্ত করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা তিন দিক থেকে অভিযান শুরু করেন। এক দল (অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, এক ব্যাটালিয়ন শক্তি) অগ্রসর হয় ভারতের কৈলাশশহর থেকে মৌলভীবাজার জেলার শমসেরনগর অক্ষ ধরে। এই দলে ছিলেন দেলোয়ার হোসেন। তাঁদের সার্বিক নেতৃত্বে ছিলেন এ জে এম আমিনুল হক (বীর উত্তম)। এ অক্ষপথে বিভিন্ন স্থানে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত ঘাঁটি ও প্রতিরক্ষা। ১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার অন্তর্গত আলীনগর চা বাগানে আক্রমণ করেন। পাকিস্তানি সেনারাও পাল্টা আক্রমণ করে। দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক ঘণ্টা তুমুল যুদ্ধ হয়। এতে পাকিস্তানিদের চরম ক্ষয়ক্ষতি হয়। এরপর তারা পিছু হটে ভানুগাছে আশ্রয় নেয়। দেলোয়ার হোসেনসহ মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের অনুসরণ করে উপস্থিত হন ভানুগাছে। এখানে আগে থেকেই ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত প্রতিরক্ষা। স্থানটি ছিল ভৌগোলিক ও সামরিক দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সিলেট দখলের জন্য ভানুগাছ থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে উচ্ছেদ করা ছিল অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ৬ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধারা ভানুগাছে আক্রমণ করেন। সারা দিন ধরে এখানে যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানি সেনারা মরিয়া হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের চেষ্টা করে। দেলোয়ার হোসেনসহ মুক্তিযোদ্ধারা এতে বিচলিত হননি। সাহসিকতার সঙ্গে তারা যুদ্ধ করেন। তাঁদের বীরত্বে বিপর্যস্ত পাকিস্তানিরা পরদিন পালিয়ে যায়। ভানুগাছে দেলোয়ার হোসেন বিক্রমের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। তার বীরত্বে পাকিস্তানিদের বেশ ক্ষতি হয়। যুদ্ধ চলাবস্থায় সন্ধ্যায় (৬ ডিসেম্বর) তিনি আহত হন। পাকিস্তানিদের ছোড়া একটি গুলি তার গালে লাগে। এতে তার চোয়াল ক্ষতিগ্রস্ত ও কয়েকটি দাঁত পড়ে যায়। তার পরও তিনি যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে যাননি। অবশ্য একটু পর তার অবস্থার অবনতি হয়ে পড়ে। তখন তার সহযোদ্ধারা তাকে দ্রুত ফিল্ড চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠান।