আবদুল হালিম

শহীদ আবদুল হালিম (জন্ম: অজানা – মৃত্যু: ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন
শহীদ আবদুল হালিমের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলার তরপুরচণ্ডী গ্রামে। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তার বাবার নাম আলী হোসেন মিয়াজি এবং মায়ের নাম ফয়জুন্নেছা।

কর্মজীবন
আবদুল হালিম চাকরি করতেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর প্রথমে দুই নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন। পরে তাকে ‘কে’ ফোর্সের অধীন নবগঠিত নবম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। [২]

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
১৯৭১ সালের ২২-২৩ নভেম্বর। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার অন্তর্গত চন্দ্রপুর-লাতুমুড়ায়। তীব্র শীত, অন্ধকার ও কুয়াশার বাধা উপেক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে যান। তারা কয়েকটি উপদলে বিভক্ত। একটি উপদলের নেতৃত্বে আবদুল হালিম। সব উপদলের সার্বিক নেতৃত্বে খন্দকার আজিজুল ইসলাম (বীর বিক্রম)। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে তারা সমবেত হন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘাঁটির অদূরে। নির্ধারিত সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে শুরু হয় গোলাবর্ষণ। গোলা আসে পেছন থেকে। ভারতীয় গোলন্দাজ ব্যাটারি সীমান্ত থেকে কামানের গোলাবর্ষণ করে। এর প্রচণ্ডতা ও তীব্রতা এমন যে মুক্তিযোদ্ধা সবার পায়ের নিচের মাটি কেঁপে ওঠে। বিকট শব্দে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়। গোলাবর্ষণ শেষ হওয়ার পর আবদুল হালিম এবং তার সহযোদ্ধারা আবার এগিয়ে যান। তাদের লক্ষ্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘাঁটি দখল করা। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা পৌঁছে যান লক্ষ্যস্থলের আনুমানিক ৪০০ গজ দূরে। গোলাবর্ষণে পাকিস্তানি সেনারা ভীতসন্ত্রস্ত। এ সুযোগে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানিদের ওপর। নিমেষে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি সেনাদের মধ্যে শুরু হয়ে যায় মেশিনগান, এলএমজি আর রাইফেলের অবিরাম গোলাগুলি। শীত, কুয়াশা আর অন্ধকারে যুদ্ধ করা বেশ কষ্ট। সব উপেক্ষা করে আবদুল হালিমসহ অন্যান্য দলের মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। তাদের সবার বীরত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অগ্রবর্তী প্রতিরক্ষায় ফাটল ধরে। হতোদ্যম পাকিস্তানিরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল বিক্রমে এগিয়ে যান মূল ঘাঁটি অভিমুখে। পাকিস্তানি সেনারা মজবুত বাংকার ও নিরাপদ প্রতিরক্ষা অবস্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর তুমুল গুলিবর্ষণ করে। এতে বিচলিত হননি আবদুল হালিম। সহযোদ্ধাদের নিয়ে ঢুকে পড়েন মূল প্রতিরক্ষার ভেতর। সকালের মধ্যে তারা আরও কিছু এলাকা দখল করে ফেলেন। এরপর হঠাৎ যুদ্ধের গতি পাল্টে যায়। পাকিস্তানি সেনারা দ্রুত তাদের দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা লাইনে সমবেত হয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। পাকিস্তানিদের দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা লাইন ছিল বেশ নিরাপদ। সেখান থেকে পুনঃসংগঠিত পাকিস্তানি সেনারা ব্যাপক গোলাগুলি শুরু করে। এ আক্রমণ ছিল বেশ জোরালো। গুলি ও বোমার আঘাতে শহীদ ও আহত হন আবদুল হালিমের দলের কয়েকজনসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা। আবদুল হালিম ও তার সহযোদ্ধারা এতে মনোবল হারাননি। দমেও যাননি। সাহসিকতার সঙ্গে মুখোমুখি যুদ্ধ করেন। তুমুল যুদ্ধের একপর্যায়ে হঠাৎ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ছোড়া একঝাঁক গুলির দু-তিনটি লাগে তার বুকে। বিদীর্ণ হয়ে যায় বুক। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। নিভে যায় তার জীবনপ্রদীপ। শহীদ হন তিনি। সেদিন যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের অধিনায়ক, আবদুল হালিমসহ প্রায় ২২ জন শহীদ হন। পরে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে চন্দ্রপুরের অদূরে সমাহিত করা হয়।

You've just added this product to the cart: