আলালের ঘরের দুলাল
Printed Price: TK. 150
Sell Price: TK. 120
20% Discount, Save Money 30 TK.
Summary: মতিলাল দুর্দান্ত বালক। এই উপন্যাসের নায়ক। চৌদ্দ বছরের ছেলে। মতিলাল তার ফার্সি শিক্ষকের দাড়িতে জ্বলন্ত টিকে ফে...
Read More... Book Description
“আলালের ঘরের দুলাল” বইয়ের মুখবন্ধ থেকে নেওয়া:
মতিলাল দুর্দান্ত বালক। এই উপন্যাসের নায়ক। চৌদ্দ বছরের ছেলে। মতিলাল তার ফার্সি শিক্ষকের দাড়িতে জ্বলন্ত টিকে ফেলে দিয়ে তার দাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। মতিলাল তার বাংলার শিক্ষককে আঁচড় দিতাে না; তাকে কামড়ে দিতাে। “গুরুমহাশয় নিদ্রিত হইলে তাহার নাকে কাটি দিয়া এবং কোঁচার উপর জ্বলন্ত অঙ্গার ফেলিয়া তীরের ন্যায় [ মতিলাল ] প্রস্থান করিত।” বেণীবাবু নামক এক সজ্জন ও প্রাজ্ঞ লােকের বাড়িতে গিয়ে মতিলাল কারাে উপর ইট মেরেছে, কাউকে ঠেলা দিয়েছে, কারাে উপর থুথু দিয়েছে, কারাে ঘিয়ের হাড়ি ভেঙে দিয়েছে। বেচারামবাবুও সত্যসন্ধিৎসু ব্যক্তি। বরদাবাবুর মতাে প্রাজ্ঞ ও সৎ ব্যক্তির খুব ভক্ত ছিলাে সে। বেচারাম বাবুর দুই ভাগিনেয় হলাে : হলধর ও গদাধর। এই দুজনও ছিল মতিলালের মতাে উড়নচণ্ডী ও উচ্ছল । সঙ্গদোষেই তারা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলাে। রামগােবিন্দ, দোলগােবিন্দ ও মানগােবিন্দ প্রমুখ বন্ধুবান্ধবের অন্যায় সংসর্গে বাবা-মার অর্থ ব্যয় করে মদ্যপান, জুয়াখেলা— প্রভৃতি কর্মে রত হয়ে মতিলাল উচ্ছন্নে গিয়েছিল । জন্মদাত্রী মা-কে ঠাস করে চড় মেরেছিল কুলাঙ্গার মতিলাল। মতিলালের মা-ভাই-বোন বাড়ি থেকে বিতাড়িত হলে সে বলেছে যে, আপদ থেকে তার শান্তি হলাে। ভিটে-মাটি হারিয়ে বারানসীতে গিয়ে এক সাধকের সংস্পর্শে অতীত পাপমােচনের জন্য অনুতপ্ত হয়ে পরম স্রষ্টার প্রেমে ধ্যানমগ্ন হয়ে অতপর মতিলালের চিত্তশুদ্ধি ঘটলে মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে আবার সে সংসার যাপন করতে থাকলাে। মতিলালের স্ত্রী খুব সতী-সাধ্বী ছিলাে। ধন গেলেও সম্ভ্রম যাতে তার নষ্ট না হয়, সেজন্য সে সতত তৎপর ছিল। তার মত স্ত্রীর মর্যাদা মতিলাল প্রথমে তাকে দেয় নি। উপন্যাসের শেষে মতিলালের ভুল ভাঙে এবং স্ত্রীর মর্যাদা সে দেয়। বাবুরাম ছিলাে মতিলালের বাবা। ধনী হলেও সে জ্ঞানী ছিলাে না। অর্থের প্রতি ছিলাে প্রচণ্ড লােভ। ধর্মের প্রতি সুমতি ছিলাে না। ঠকচাচার প্ররােচনায় ধর্মপ্রাণা স্ত্রীকে রেখে সে আর একটি বিয়ে করে অর্থলােভে। বাবুরামের নৌকা যখন ডুবে যাচ্ছিলাে, তখনকার সেই চিন্তাক্লিষ্ট সময়ে তার স্ত্রী তার স্মৃতিপটে আসে। স্ত্রী তাকে বলেছিলাে, পরমেশ্বরকে স্মরণ করার জন্য। স্রষ্টাকে স্মরণ করায় মতিলালসহ বাবুরাম সলিলসমাধি থেকে বেঁচে যায়। তবে বাবুরামের মৃত্যুর মুহূর্তে বরদাপ্রসাদের মতাে ধার্মিক ও জ্ঞানী ব্যক্তি তার শিয়রে উপস্থিত থাকায়, স্রষ্টার নাম স্মরণ করে তার স্বীয় পাপের প্রায়শ্চিত্ত করে বাবুরাম মৃত্যুবরণ করতে পেরেছিল। ঠকচাচা উপন্যাসটির একটি প্রধান কূটচরিত্র। দলিল জাল করতে, মিথ্যা সাক্ষী সাজাতে, দাঙ্গাহাঙ্গামা বাধাতে এবং হয়কে নয় করিতে, নয়কে ছয় করিতে সে খুব দক্ষ ছিল। মাথায় পাগড়ি গায়ে পিরহানও হাতে তসবি থাকতাে ঠকচাচার। এই মুসলমান চরিত্রটিকে ঔপন্যাসিক চতুর, মামলাবাজ ও ভণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
ধনী হলেও সে জ্ঞানী ছিলাে না। অর্থের প্রতি ছিলাে প্রচণ্ড লােভ। ধর্মের প্রতি সুমতি ছিলাে না।
প্রথম জিনিসটার মধ্যে সবসময়ই একটা মাহাত্ম্য থাকে। উপরন্তু সেটি তাকেও মাহাত্ম্য দান করে যখন তা কোন ব্যক্তিবিশেষের উপর আরোপিত হয়। যেমন – পরীক্ষায় প্রথম হওয়া। এটি যেমন সন্মানের, সেই সন্মানটি একইসাথে দেওয়া হয় যিনি প্রথম হন।
এই উদাহরণে নির্দ্বিধায় প্রয়োগ করা যাবে প্যারীচাঁদ মিত্রের “আলালের ঘরে দুলাল” উপন্যাসটি। এটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস। এবং এই কীর্তি স্থাপনের জন্য টেকচাঁদ ঠাকুর ছদ্মনামে লেখা প্যারীচাঁদ মিত্রও অমর হয়ে থাকবেন।
সেই উনবিংশ শতাব্দীতে বাংলা গদ্য যখন সবে জন্মলাভ করল, তখন তা লেখা হত সংস্কৃতের আদলে। ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (বাংলা গদ্যের জনক) তার লেখায় ব্যবহার করতেন প্রচুর সংস্কৃত শব্দ। তার ভাষাকে আদর্শ ধরে লেখা হত গদ্য। সাধারণ মানুষের কথ্য ভাষার সাথে সম্পর্কহীন এই ভাষায় রচিত সাহিত্যের বিষয়াবলীও ছিল সীমিত। মূলত ইংরেজী, সংস্কৃত, হিন্দি ইত্যাদি ভাষার সারসঙ্কলন বা অনুবাদই ছিল তখনকার গদ্য সাহিত্যের বিষয়বস্তু।
কিন্তু আপামর জনসাধারণের ভাষা ও তাদের দৈনন্দিন জীবনকাহিনী নিয়েও যে গদ্য সাহিত্য রচনা করা সম্ভব সেই বিশ্বাসে সর্বপ্রথম আলো দেখান প্যারীচাঁদ মিত্র তার এই উপন্যাসের মাধ্যমে। তার এই ভাষা এতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠল যে এর নাম দেওয়া হল “আলালী ভাষা”।
উপন্যাসটির কাহিনী অতটা আহামরি না হলেও সেই গ্লানিতা ঘুচে গেছে বইটির এই অনন্য সাধারণ বৈশিষ্ট্যের কারণে। হুমায়ুন আজাদের মতই বলা যায়, এটি আমাদের বাংলা সাহিত্যের একটি উজ্জ্বল দীপাবলি যার থেকে পরবর্তিতে আলোকবর্তিকা পেয়েছে এই সাহিত্যের আরও অসাধারণ সব কর্মী ও তাদের কর্ম।
আলালের ঘরের দুলাল’-এর লেখক প্যারীচাঁদ মিত্র। তার ছদ্মনাম ‘টেকচাঁদ ঠাকুর’।গ্রন্থটি সম্পূর্ণ সামাজিক পটভূমিকায় রচিত। নব্য শিক্ষিত ইয়ংবেঙ্গলদের কার্যকলাপ ও পরিণতি গ্রন্থটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। প্যারীচাঁদ মিত্র এই নবলব্ধ দৃষ্টিকোণ থেকে লক্ষ্য করলেন যে, ধর্ম ও নীতিহীনতাই উচ্ছৃঙ্খলতার মূল কারণ। সুতরাং জীবনযাত্রা প্রণালীর মধ্যেই রয়েছে এ থেকে মুক্তির পথ। এ কথা প্রতিপন্ন করার জন্যেই তিনি আলালের ঘরের দুলালের কাহিনী নির্মাণ করেন।ধনী বিষয়ী বাবুরামের পুত্র মতিলাল কুসঙ্গে পড়ে এবং শিক্ষার ব্যপারে পিতার অবহেলা তাকে অধ:পতনে নিয়ে যায়। পিতার মৃত্যুর পর মতিলাল প্রাপ্ত সব সম্পত্তি নষ্ট করে ফেলে। পরে দু:খের জীবনে তার বোধোদয় ঘটে এবং হৃদয়-মন পরিবর্তিত হওয়ায় সে সৎ ও ধর্মনিষ্ট হয়। ধূর্ত উকিল বটলর, অর্থলোভী বাঞ্ছারাম, তোষামদকারী বক্রেশ্বর ইত্যাদি চরিত্র জীবন্ত। তবে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য হলো মোকাজান মিঞা বা ঠকচাচা। চরিত্রটি ধূর্ততা, বৈষয়িক বুদ্ধি ও প্রানময়তা নিয়ে এ গ্রন্থের সর্বাপেক্ষা জীবন্ত চরিত্র।
বাংলা সাহিত্যের আধুনিক আদর্শের স্বার্থক উপন্যাস হিসেবে বঙ্কিম চন্দ্রের ‘দুর্গেশ নন্দিনী’ প্যারী চাঁদ মিত্র রচিত ‘আলালের ঘরের দুলাল (১৮৫৮ খ্রি.)’ এবং কালী প্রসন্ন সিংহের ‘হুতোম প্যাচার নকশা (১৮৬২ খ্রি.)’ কেন্দ্র করেই বাংলা উপন্যাসের বীজ অনুরীত হয়ে উঠেছিল।
‘আলালের ঘরের দুলাল’ উপন্যাসে বাবু রাম বাবুর জ্যেষ্ঠ পুত্র মতিলালের জীবনে ছন্ন ছাড়া নারী সঙ্গ, কামুকতা এবং মদ্যপান ঘটিত বিড়ম্বনা সুন্দরভাবে চিত্রিত হয়েছে। অবশ্য সে সময়ের লেখা আরেকটি উপন্যাস ভবানী চরনের ‘নববাবু বিলাস’। এই নব বাবু বিলাসেও তৎকালীন বাঙালী সমাজের চিত্র পিতার অমনোযোগের ফলে পুত্রের পাঠ্যাভাসের হানি হলে তার চরিত্র স্ত্রৈন্যতা এবং পাপা দোষের দ্বারা কি পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে উঠতে পারে তা সুন্দরভাবে এই উপন্যাসটিতেও (নববাবু বিলাস) দেখানো হয়েছে। কিন্তু ‘নব বাবু বিলাস’ এর সঙ্গে আলালের তফাৎ হলো তৎকালীন তিনি শুধু সমাজের ভ্রষ্টাচারের চিত্রই অঙ্কিত করেন নাই, গ্রন্থটির মধ্যে তিনি একটি ইতিবাচক দিকও স্বার্থকভাবে তুলে ধরেছেন। বাবু রাম বাবুর কনিষ্ঠ পুত্র রাম লালের উত্তম চরিত্র হওয়ার কাহিনী এবং জীবন বোধের জন্য প্যারী চাঁদ মিত্র সে আমলে মুক্ত ভাবাদর্শ ও উত্তম জীবন বোধ দ্বারা পরিচিত হয়েছিলেন।
সুতরাং কাহিনীর দিক থেকে প্যারী চাঁদ মিত্রের আলাল ও তৎকালীন সমাজে একটি বাস্তব জীবন বোধকে তার সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন লেখনির মাধ্যমেই সমাজের কাছে নব্য বাঙাল জাতির কাছে স্বার্থকভাবে তুলে ধরেছিলেন।
Khub sundor vabe deoa ache