বিচিত চিন্তা
Printed Price: TK. 400
Sell Price: TK. 320
20% Discount, Save Money 80 TK.
Summary: বাঙলাদেশে, সাহিত্য ও সংস্কৃতির জগৎ-এর প্রধান ব্যক্তিদের মধ্যে ড. আহমদ শরীফ-ই সম্ভবত একমাত্র ব্যক্তি যিনি সকলের কাছে প্রিয় হওয়ার দুর্বলতাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। পণ্ডিত ও বয়স্ক বিদ্রোহী ড. আহমদ শরীফ
Read More... Book Description
বাঙলাদেশে, সাহিত্য ও সংস্কৃতির জগৎ-এর প্রধান ব্যক্তিদের মধ্যে ড. আহমদ শরীফ-ই সম্ভবত একমাত্র ব্যক্তি যিনি সকলের কাছে প্রিয় হওয়ার দুর্বলতাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। পণ্ডিত ও বয়স্ক বিদ্রোহী ড. আহমদ শরীফ চট্টগ্রামের পটিয়া সুচক্রচন্ডী গ্রামে ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯২১ সনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ সনে ঢাকায় প্রয়াত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৪ সনে বাঙলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ও ১৯৬৭ সনে পি. এইচ. ডি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। কলেজে অধ্যাপনার (১৯৪৫-৪৯) মধ্য দিয়ে পেশাগত জীবন শুরু। পরে এক বছরের কিছু বেশি সময় রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রে অনুষ্ঠান সহকারী হিসেবে থাকার পর ১৯৫০-এর শেষের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙলা বিভাগে যোগ দিয়ে একটানা ৩৪ বছর অধ্যাপনা করেন। ১৯৮৩ সনে অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের সভাপতি ও কলা অনুষদের চারবার নির্বাচিত ডিন ছিলেন। সেই সাথে, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের অন্যতম রূপকার ছিলেন। পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-এর বাঙলা বিভাগের প্রথম ‘কাজী নজরুল ইসলাম অধ্যাপক’ পদে ১৯৮৪-৮৬ পর্যন্ত নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। ভাববাদ, মানবতাবাদ ও মার্কসবাদের যৌগিক সমন্বয় প্রতিফলিত হয়েছিল তাঁর চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা, আচার-আচরণ, বক্তব্য ও লেখনীতে। তার রচিত শতাধিক গ্রন্থে তিনি অত্যন্ত জোরালো যুক্তি দিয়ে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার। বিশ্বাস ও সংস্কার পরিত্যাগ করেছিলেন এবং আন্তরিকভাবে আশা পোষণ করেছিলেন সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার। পঞ্চম দশক থেকে নব্বই দশকের শেষ অবধি সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, দর্শন, ইতিহাসসহ প্রায় সব বিষয়ে তিনি অজস্র লিখেছেন। দ্রোহী সমাজ পরিবর্তনকামীদের কাছে তাঁর পুস্তকরাশির জনপ্রিয়তা ঈর্ষণীয়, তাঁর রচিত পুস্তকরাশির মধ্যে বিচিত চিন্তা, স্বদেশ অন্বেষা, মধ্যযুগের সাহিত্যে সমাজ ও সংস্কৃতির রূপ, বাঙলার সুফি সাহিত্য, বাঙালির চিন্তা-চেতনার বিবর্তন ধারা, বাঙলার বিপ্লবী পটভূমি, এ শতকে আমাদের জীবন ধারার রূপরেখা, নির্বাচিত প্রবন্ধ, প্রত্যয় ও প্রত্যাশা এবং বিশেষ করে দু’খণ্ডে রচিত বাঙালি ও বাঙলা সাহিত্য তাঁর অসামান্য কীর্তি। তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, পিতৃব্য আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ-এর অনুপ্রেরণায় মধ্যযুগের বাঙালা সাহিত্য ও সমাজ সম্পর্কে পাহাড়সম গবেষণাকর্ম তাঁকে কিংবদন্তি পরিণত করেছে। উভয় বঙ্গে এ বিষয়ে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয় এবং অদ্যাবধি স্থানটি শূন্য রয়ে গেছে। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় ব্যয় করে তিনি মধ্যযুগের সাহিত্য ও সামাজিক ইতিহাস রচনা করে গেছেন। বিশ্লেষণাত্মক তথ্য, তত্ত্ব ও যুক্তি সমৃদ্ধ দীর্ঘ ভূমিকার মাধ্যমে তিনি মধ্যযুগের সমাজ ও সংস্কৃতির ইতিহাস বাঙলা ভাষা-ভাষী মানুষকে দিয়ে গেছেন যাতে তিনি জীবৎকালে বেশ কিছু পুরস্কার লাভ করেছিলেন, তার মধ্যে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদকসহ পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘সম্মান সূচক ডিলিট’ ডিগ্রি পেয়েছিলেন। তাঁর বিশাল পুস্তকরাশির মধ্যে যেমন মানুষের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক মু্ক্তির কথা রয়েছে তেমনি তৎকালীন পাকিস্তানের বেড়াজাল থেকে পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৬২ সনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের নেতা, তাত্ত্বিক সিরাজুল আলম খান-এ নেতৃত্বে গঠিত ‘নিউক্লিয়াস’ (স্বাধীন বাঙলা বিপ্লবী পরিষদ)-এর সাথে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। ১৯৬৫ সনে রচিত ‘ইতিহাসের ধারায় বাঙালী’ প্রবন্ধে পূর্ব পাকিস্তানকে ‘বাঙলাদেশ’ এবং ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটির কথা উল্লেখ ছিল। এ ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পূর্ব সময় থেকে তাঁর মৃত্যু অবধি তিনি দেশের সব ক্রান্তিলগ্নে কখনও এককভাবে, কখনো সম্মিলিতভাবে তা প্রশমনের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। উপমহাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনীতি ক্ষেত্রে অসামান্য পণ্ডিত, বিদ্রোহী, অসাম্প্রদয়িক, যুক্তিবাদী, দার্শনিক, বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব, প্রগতিশীল, মানবতাবাদী, মুক্তবুদ্ধির ও নির্মোহ চিন্তার ধারক ড. আহমদ শরীফকে ধর্মান্ধরা শাস্ত্র ও প্রথা বিরোধিতার কারণে ‘মুরতাদ’ আখ্যায়িত করেছিল। কথা ও কর্মে অবিচল, অটল, দৃঢ়চেতা আহমদ শরীফ সবরকমের প্রথাসংস্কার শৃঙ্খল ছিন্ন করে ১৯৯৫ সনে লিপিবদ্ধ করা ‘অসিয়তনামা’র মাধ্যমে মরনোত্তর চক্ষু দেহদান করে গেছেন। সেই অসিয়তনামায় উল্লেখ ছিল-‘চক্ষু শ্রেষ্ঠ প্রত্যঙ্গ, আর রক্ত হচ্ছে প্রাণ প্রতীক। কাজেই গোটা অঙ্গ কবরের কীটের খাদ্য হওয়ার চেয়ে মানুষের কাজে লাগাই তো বাঞ্ছনীয়।’
বিচিত চিন্তা বইটির প্রথম প্রকাশনা সংস্থার (১৯৬৮) নাম জানতে চাই