বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে
Printed Price: TK. 460
Sell Price: TK. 391
15% Discount, Save Money 69 TK.
Summary: রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ভেঙে গেছে। আমার কৈশোরে যে গণতন্ত্র হাটি হাটি পা করছিলো বলে একটা আশা জন্মেছিলো যে আমরা হয়তো কোথাও পৌঁছে যাবো - সেই আশা ধ্বংস হয়ে গেছে। আই
Read More... Book Description
প্রত্যেক লেখক “সময়ের” গর্ভ থেকে জন্ম নেয়। আমি যে সময়ের লেখক, সে সময়কে ধারণ করা এবং সে সময়কে কাটাছেঁড়া করাটাই একজন লেখকের মূল কাজ।
তো আমি আমার সময়ে কী দেখেছি?
রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ভেঙে গেছে। আমার কৈশোরে যে গণতন্ত্র হাটি হাটি পা করছিলো বলে একটা আশা জন্মেছিলো যে আমরা হয়তো কোথাও পৌঁছে যাবো – সেই আশা ধ্বংস হয়ে গেছে। আই ফীল বিট্রেইড। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নিরঙ্কুশ একনায়িকাতন্ত্র এবং পুরা দেশটা কার্যত এখন শেখ পরিবারের পারিবারিক সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। সমাজের প্রতিটি স্তরে নৈরাজ্য ও দুর্নীতি। রাজনীতিবিদরা অসৎ ও বিকারগ্রস্ত; ও বিচারকরা দুর্নীতিগ্রস্ত, যেটা ঔপনিবেশিক কিংবা পাকিস্তান আমলেও এই অঞ্চলের মানুষ কল্পনা করে নি।
এই ভয়ঙ্কর অধঃপতন আমরা কীভাবে মেনে নিলাম, চোখের সামনে হতে থাকলো অথচ আমরা প্রতিরোধ করতে পারলাম না। কেন?
প্রথমত আমাদের শহুরে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের সীমাহীন লোভ ও স্বার্থপরতা ষোলোকোটি মানুষের চরিত্র বদলে দিয়েছে। লুটপাটকে নর্মালাইজ করে ফেলা হয়েছে। আর এই লুটপাট, এই ধ্বংস, এই ডাকাতি করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকে সামনে রেখে। আপনাদের শেখানো হয়েছিলো আমরা ‘মহান’ জাতি – আমাদের ভাষা ও মুক্তিযুদ্ধের জন্য। এই শেখানো বুলি আপনার অহমকে এতোই আরাম দিয়েছিলো যে ড্রাগ এডিকশানের মতো এগুলো বিশ্বাস করেছেন। শেখ মুজিব, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলা ভাষা ও বাঙালি – এই চার বিষয়ে যেই কেচ্ছাই বলা হোক আপনারা বিনা শর্তে মেনে নিয়েছেন। এই ন্যাশনাল মীথকে আপনারা মনে করেছেন একটা প্রকাণ্ড শীল্ড যার নীচে লুকালে আর কোনো অপঘাত আপনাকে স্পর্শ করবে না। এই সুশীতল ছায়ায় বসে আপনি আসলেই ধরে নিয়েছিলেন যে আমরা মহান এক জাতি – কেননা ‘মহান’ মনে করলেই শুধু, স্মৃতির সাথে একটা রফা হয়।
এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে যে, যেকোনো সুস্থ এনকোয়ারিকে স্টিগমাটাইজ করা হয়েছে। আপনি যদি শেখ মুজিব, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলা ভাষা ও বাঙালি বিষয়ক সরকারি ন্যারেটিভকে প্রশ্ন করেন, আপনি ছাগু ও পাকিস্তান-পন্থী। আমাদের ন্যাশনাল মীথের প্রতিটি লাইন লেখা হয়েছে এম্বেলিশমেন্ট ও যুদ্ধে পার্টিসিপেট করতে না পারার গ্লানিবোধ থেকে। সেই ন্যারেটিভ এক প্রজন্ম থেকে আপনার প্রজন্মে পরিবাহিত করা হয়েছে ঘৃণার ব্যবসা করে। এই সত্য আপনি উচ্চারণ করতে পারেন না দলছাড়া হয়ে যাবেন এই ভয়ে।
কাজটা ঠিক তারাই করেছে যাদের এই পরিস্থিতি আটকানোর কথা ছিলো। আমরা চোখের সামনে দেখেছি – মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পুণ্যস্নান করতে গিয়ে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ কার্যত একটা ন্যাশনাল মীথ বিল্ডিং প্রজেক্ট করেছেন, আপনাদের বাঙালি সুপ্রিমেসির ড্রাগ সাপ্লাই দিয়েছেন, আপনারা সুখটান দিয়েছেন – এবং এই ফাঁকে আওয়ামী লীগ লুটপাট চালিয়ে গেছে। এখন আর কোনোই প্রশ্ন করতে পারেন না কেননা আপনার মনে ভয়, যদি আমাকে রাজাকার কিংবা ভারত-বিরোধী ট্যাগ দিয়ে দেয়।
এই হোলো আমার সময়ের জাইটগাইস্ট – সংক্ষেপে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবিতার গতিপ্রবাহ।
প্রত্যেক লেখকের একটা ‘বুঝ’ থাকে তার সময়ের। আমার যে ‘বুঝ’ তার কিছুটা অংশ এরকম: বাঙালি বুদ্ধিজীবিতার প্রাণ-ভোমরা শেখ মুজিব, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলা ভাষা ও বাঙালি – এই ঘেরাটোপ থেকে আপনি যদি বেরিয়ে আসতে না পারেন – আপনি নিজের সাথে, নিজের সমাজ ও রাষ্ট্রের সাথে প্রয়োজনীয় কনভার্সেশানটা শুরুই করতে পারবেন না। একজন লেখক হিসেবে, একজন এজেন্ট প্রোভোকেটিওর হিসেবে আমি মনে করি যে আমার সময়ের মূল কাজ হোলো – আমাদের ন্যাশনাল মীথের প্রতিটি স্তম্ভকে আঘাত করা – রেলেন্টলেসলি। আমরা তাই করছি। যে মিথ্যা গর্ব আপনার চারপাশে একটা কমফোর্ট জোন তৈরি করেছে, আমরা সেটা ভাঙতে চাই।
আমি মনে করি রাষ্ট্রের সাথে বোঝাপড়া তো অনেক দূরের কথা, বাংলাদেশের মানুষ এখনও সমাজের সাথে কনভার্সেশানের, অন্যকে মেনে নেয়ার যে ভোকাবুলারি সেইটাই আয়ত্ত করে নি। অথচ সে বাস করে ইনফরমেশন আর মিথ্যা জাত্যাভিমানের দুর্গে। এই দুর্গকে না ভেঙে যারা রাষ্ট্রচিন্তার আহবান করেন, আমার ধারণা তারা এক বিপদ থেকে আরেক বিপদে লাফ দেয়ার পরিকল্পনা করছেন – তারা প্রাইমারী স্কুলের ছাত্রদের য়ুনিভার্সিটিতে ভর্তি করার পাঁয়তারা করছেন। আমার সময়ে বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবীতার মূল ফোকাস হওয়া উচিত – আমরা আসলে কোথায় আছি সেটা দেখিয়ে দেয়া। এরকম অজনপ্রিয় ও প্রায়শ জনঅপ্রিয় কাজ করা খুবই রিস্কি – কিন্তু আমি তাই করবো। কেননা আমি আমার সময়ের লেখক। যদি আমি একশ বছর আগের লেখক হতাম হয়তো ধর্ম ও সমাজ হতো আমার লক্ষ্য।
আমি চাই আপনি মেনে নিন যে মহৎ কিছু আমরা এখনও করতে পারি নি। আপনাকে শুধু শেখানো হয়েছে সামান্যকে মহৎ বলতে পারার চালাকি আর আপনি তাতেই খুশী। চালাকি কাওকে বেশীদূর নেয় না। আমাকে আর আপনাকে কঠিন রাস্তায় উঠতে হবে, কঠিনকেই ভালোবাসতে হবে।
আপনি যা নিয়ে গর্ব করতে চান – সেটা বানানো হয় নি মোটেও – আপনাকে নিজেই তা বানাতে হবে – এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হোলো – আপনার-আমার পূর্বপুরুষ এমন কিছুই করে নি যে কারণে আপনি গর্ব করতে পারেন। সব কিছু – আই মীন – সবকিছু আপনাকেই করতে হবে – শুরু থেকে করতে হবে। আমি আর আপনি – অনাথ সময়ের সন্তান। এই বোধোদয় হোলেই শুধু সত্যিকারের মহৎ কিছু করার জন্য আপনি প্রস্তুত হবেন। আমরা আমাদের অতীত থেকে ‘বিচ্যূত’ হবো – কেননা এ ছাড়া আর বিকল্প নেই।
আমি সেই আঘাতের সময়ের লেখক। আমাকে আপনার অবশ্যই পছন্দ হবে না। আমি শুধু আশা করেছি আমার জাতির মানুষ “বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে”কে কাজের কিছু মনে করে তারপর ফাহাম আব্দুস সালামকে গালি দেবে।
Reviews
There are no reviews yet.