ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা
Printed Price: TK. 650
Sell Price: TK. 540
17% Discount, Save Money 110 TK.
Summary: একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে একটি জাতি গঠনে বা একটি দেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে তার এক অনন্য দৃষ্টান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। জন্মলগ্ন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শুধু উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেই এই প্রতিষ্ঠান ভূমিকা পালন করেনি,
Read More... Book Description
একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে একটি জাতি গঠনে বা একটি দেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে তার এক অনন্য দৃষ্টান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। জন্মলগ্ন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শুধু উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেই এই প্রতিষ্ঠান ভূমিকা পালন করেনি, বরং একটি ভূখণ্ডের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ তথা জাতিসত্তা নির্মাণে রেখেছে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান, যার পরিণতিতে সম্ভবপর হয়েছে একটি স্বাধীন দেশের সৃষ্টি। ১৯২১ সালে জন্মের পাঁচ বছরের মধ্যেই এ প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন (১৯২৬); তারপর ছাব্বিশ বছরের ব্যবধানে মহান ভাষা আন্দোলন (১৯৫২), যা এ দেশে ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা বিনির্মাণে রেখেছে মুখ্য ভূমিকা; এর দশ বছরের ব্যবধানে গড়ে উঠেছে গণমুখী শিক্ষা আন্দোলন (১৯৬২) এবং তার সাত বছরের মধ্যে স্বাধিকারের পক্ষে গণ-অভ্যুত্থান (১৯৬৯) এবং দুই বছরের মধ্যে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। এর প্রতিটি সংগ্রাম-আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীরাই পালন করেছেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা। পৃথিবীর ইতিহাসে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা দান ও উন্নত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনাসহ এমন সামাজিক ভূমিকা পালনের অনন্য নজির সম্ভবত আর নেই।
এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম-ইতিহাসের মধ্যেও রয়েছে সংগ্রামশীলতা ও শক্তির বীজ। খ্যাতনামা গবেষক ও প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ তাঁর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা (২০১৬) শীর্ষক বইয়ে উদ্ঘাটন করেছেন এই শক্তির ইতিহাস। ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণে পিষ্ট ও অবহেলিত একটি জনপদের ব্রাত্য জনগোষ্ঠী একটি উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষায় আলোকিত হওয়ার জন্য কীরূপ আকুল হয়ে উঠেছিল এবং পরবর্তীকালে সেই প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্রগতির ধারায় সার্বিক শিক্ষার আলোয় কীভাবে জাগ্রত হয়েছিল, তারই একটি দীর্ঘ সহৃদয় আখ্যান হিসেবে এ গ্রন্থ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একটি জনগোষ্ঠীকে পরিকল্পিতভাবে পশ্চাৎপদ করে রাখার উপনিবেশবাদী প্রয়াসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ঔপনিবেশিক শাসকশক্তির স্নেহ-আদরে লালিত এ দেশেরই সুবিধাভোগী একটি ‘এলিট’ শ্রেণির ঈর্ষাপুষ্ট ও বিদ্বেষপ্রণোদিত আকাঙ্ক্ষা। দেড় শতাধিক বছরের বঞ্চনা ও নিগ্রহে অধঃপতিত একটি জনমণ্ডলীর মধ্যে জাগ্রত সচেতন উপলব্ধির মূলকথা ছিল উচ্চশিক্ষা ভিন্ন তাঁর মুক্তির পথ অবরুদ্ধ। এরূপ মুক্তির আকাঙ্ক্ষা থেকেই জন্ম নিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান।
আরও পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, সতেরো শতকের শুরুতেই ঢাকার আবির্ভাব ঘটেছিল অখণ্ড বাংলার রাজধানীরূপে। এক শ বছর পরে আঠারো শতকের শুরুতে ঢাকা রাজধানীর মর্যাদা হারায়। রাজধানী চলে যায় মুর্শিদাবাদে। তারপর ব্রিটিশরা কলকাতায় রাজধানী স্থাপন করে। দুই শতকেরও অধিক কালজুড়ে একটি কেন্দ্র বা রাজধানীর মর্যাদা হারিয়ে ঢাকা হয়ে পড়েছিল স্থবির ও অনালোকিত। শুধু ঢাকা নয়, ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলার সমগ্র পূর্বাঞ্চলই একরকম বৈষম্য, গতিহীনতা ও প্রচণ্ড হতাশার শিকার। একটি তথ্য থেকেই মিলবে এর প্রমাণ। অবিভক্ত বাংলার প্রধান ১৯টি কলেজ আর ৪৫টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজ ও অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জনসংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ববাংলায় ছিল যথাক্রমে ৯টি আর ১৩টি মাত্র। (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা, পৃ. ২৯-৩০) বিশ শতকের শুরুতে ব্রিটিশ শাসকশক্তি বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে ঢাকাকে রাজধানীর মর্যাদা দিলেও বাংলার জনগণ বঙ্গভঙ্গ মেনে নেয়নি। বিপুল আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল শাসককুল। তবে এই ‘থিসিস’ ও ‘অ্যান্টিথিসিসের’ দ্বন্দ্বে সৃষ্টি হয়েছিল যে ‘সিনথেসিসের’, তারই পরিপক্ব পরিণতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
Reviews
There are no reviews yet.