17%
অভ্র নিরুদ্দেশ
Book Details
Title | অভ্র নিরুদ্দেশ |
Author | আবুল ফাতাহ |
Publisher | নন্দন |
Category | রহস্য, ভৌতিক, থ্রিলার ও অ্যাডভেঞ্চার |
ISBN | 9789849415367 |
Edition | 1st Published, 2022 |
Number Of Page | 112 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
Cover Type | হার্ড কভার |
Book Description
Author Info
হযরত মাওলানা আবুল ফাতাহ্ মুহাম্মাদ ইয়াহ্ইয়া রাহ. আলেম সমাজে উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের নাম। আশির দশকে চলমান কাফেলার অবিরাম কর্মের দীপ্তিময় অগ্রপথিক। তিনি বিগত ২৪ শাবান, ১৪৩৮ হি., ২০ মে, ২০১৭ ঈ. তারিখে আনুমানিক সকাল সাড়ে নয়টায় আমাদেরকে ছেড়ে অনন্তকালের জন্য পরপারে চলে গেছেন। সাহিত্যিক গবেষক বরেণ্য এই আলেমে দীন মাওলানা আবুল ফাতাহ রাহ. ছিলেন দীর্ঘদেহী, শুভ্রবর্ণ, সদা হাস্যোজ্জ্বল, স্পষ্টভাষী, নিষ্ঠাবান, আত্মত্যাগী, উদার, আত্মবিশ্বাসী, কর্মোদ্যমী, বিস্তৃত চিন্তা-চেতনার অধিকারী, সৎসাহসী, মার্জিত চরিত্রের অধিকারী এবং আকাবিরে দেওবন্দের চেতনায় উদ্ভাসিত এক মনীষী। ১৯৫৪ ঈ. সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সুবহে সাদিকের সময় মোমেনশাহী জেলার তারাকান্দা থানাধীন মালিডাঙ্গা গ্রামে ফরায়েযী বংশের এক ঐতিহ্যবাহী আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতা হযরত মাওলানা মিয়া হুসাইন রাহ. একজন প্রাজ্ঞ ও প্রথিতযশা আলেম ছিলেন। তিনি দারুল উলূম দেওবন্দে অধ্যয়নকালে কোন এক গোধূলিলগ্নে কুরআন তিলাওয়াত করার সময় হযরত ইয়াহইয়া আ.-এর খোদাভীরুতার বর্ণনায় অভিভূত হয়ে সংকল্প করেছিলেন যে, তিনি তার প্রথম সন্তানের নাম ‘ইয়াহইয়া’ রাখবেন। সে হিসাবে জন্মের পর পিতা তাঁর নাম রেখেছিলেন ‘ইয়াহইয়া’। ছাত্রজীবনে কর্মপটু ছিলেন বলে তাঁর এক প্রিয় উস্তায তাঁকে ‘আবুল ফাতাহ’ নামে অভিহিত করেন। পরে তিনি ‘আবুল ফাতাহ মুহাম্মাদ ইয়াহ্ইয়া’ এই যুক্ত নামেই পরিচিত হন। শিক্ষা-দীক্ষা পারিবারিক ঐতিহ্যানুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষার সূচনা হয় তাঁর বিদুষী মায়ের কাছে। এরপর গ্রামের মক্তবে। তাঁর নানার বাড়ি হালুয়াঘাট, ধারা বাজার, চাঁদশ্রীঁতে। সেখানে তিনি ‘পূর্ব চাঁদশ্রী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়’-এ প্রাইমারী শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৬৫ঈ. সালে মোমেনশাহী ‘জামিয়া ইসলামিয়া’য় ভর্তি হয়ে উর্দু ও ফারসীখানার পাঠ সমাপ্ত করেন। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে মাদরাসা শিক্ষা ধীরগতি হয়ে পড়ায় তিনি বাড়িতে চলে যান। তখন পারিবারিক আর্থিক অনটনের কারণে কিছুদিন ব্যবসা করেন। এরপর আবার নানার বাড়ির কাছে ‘কুতিকুরা করুয়াপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে’ সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং দশম শ্রেণী পর্যন্ত বিজ্ঞান নিয়ে অধ্যয়ন করেন। অতপর পুনরায় মাদরাসায় ভর্তি হয়ে দ্বীনীশিক্ষা অর্জনে ব্রতী হন এবং মিযান থেকে শরহে জামী পর্যন্ত মোমেনশাহী জামিয়া ইসলামিয়ায় অধ্যয়ন করেন। পড়া-লেখার পাশাপাশি অসুস্থ বাবার সেবা করার উদ্দেশ্যে শরহে জামী পড়েন ‘জামিয়া ইসলামিয়া মাদানিয়া যাত্রাবাড়ীতে’। সেখানে যেসকল উস্তাযের কাছে পড়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন তখনকার নবীন উস্তায হযরত মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দামাত বারাকাতুহুম। এরপর ১৯৭৯ ঈ. সালে জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ মাদরাসায় শরহে বেকায়া জামাতে ভর্তি হন। কেননা হযরত মাওলানা আব্দুল হাফিয রাহ., হযরত মাওলানা আশরাফ আলী দা. বা., হযরত মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমী দা. বা., হযরত মাওলানা মুফতী গোলাম মোস্তফা রাহ., হযরত মাওলানা সুলায়মান নু‘মানী দা. বা., হযরত মাওলানা মুফতী আব্দুল হান্নান দা. বা. প্রমুখ দেশবরেণ্য উলামায়ে কেরাম তখন ফরিদাবাদ মাদরাসায় শিক্ষক হিসাবে ছিলেন। সেখানে নিজ শ্রেণির প্রতিদ্বন্দ্বী বন্ধু, প্রতিভাবান ছাত্র, চিন্তা-চেতনার দীপ্তিময় সঙ্গী হযরত মাওলানা ইসহাক ফরিদী রাহ.-এর সাথে ঘনিষ্ঠ হন। দরসের এই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও পরীক্ষার প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে শরহে বেকায়া পড়েন এবং বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়্যাহ এর অধীনে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তী বছর কোনো এক কারণে বছরের মাঝেই তিনি চলে যান মোমেনশাহী ‘আশরাফুল উলূম বালিয়া’ মাদরাসায়। সেখানে জালালাইন পড়েন। মেশকাত পড়েন চট্রগ্রামের জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ায়। ১৯৮০ সালে হযরত মাওলানা ইয়াহইয়া জাহাঙ্গীর দামাত বারাকাতুহুমের বিশেষ উদ্যোগে উস্তাযুল আসাতিযা হযরত মাওলানা কাজী মু‘তাসিম বিল্লাহ রাহ. মালিবাগ জামিয়ার মুহতামিম হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৮২-৮৩ ঈ. শিক্ষাবর্ষে হযরত মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমী দা. বা.সহ তৎকালীন কিছু মাহের ও দরদী উস্তায ফরিদাবাদ থেকে মালিবাগ জামিয়ায় যোগদান করেন। তাঁদের সাথে চলে আসেন হযরত মাওলানা আবুল ফাতাহ রাহ.-এর প্রতিভাবান ছাত্রবন্ধু হযরত মাওলানা ইসহাক ফরিদী রাহ.। তাই তিনিও তাকমীল জামাত পড়ার জন্য মালিবাগ জামিয়ায় এসে ভর্তি হন। বেফাকুল মাদারিসের অধীনে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে ৪র্থ স্থান অধিকার করেন। ইলমি রিহলার জন্য বিদেশ গমনের অদম্য আগ্রহ থাকলেও পারিবারিক আর্থিক অনটনের কারণে তা হয়ে উঠেনি। কর্মজীবন ১৯৮৪সালে তিনি সিলেট জেলার গাছবাড়ীতে অবস্থিত আকনী মাযাহিরুল উলূম মাদরাসায় সহীহ মুসলিমের উস্তায হিসাবে কর্মজীবনের সূচনা করেন। পরবর্তী বছর মালিবাগ জামিয়া শারইয়্যাহ্তে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। দীর্ঘ চার বছর শিক্ষকতার পর জামিয়া শামসুল উলূম (পীরজঙ্গী) মাদরাসায় যোগদান করেন। তিন বছর সেখানে শিক্ষকতার পর পুনরায় তিনি মালিবাগ জামিয়ায় চলে আসেন। ১৯৯৯ সালের শুরুর দিকে অত্র প্রতিষ্ঠানের নায়েবে মুহতামিম পদে অধিষ্ঠিত হন এবং দীর্ঘ নয় বছর কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। বেফাকসহ জাতীয় পর্যায়ের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় স্বেচ্ছায় এ পদ হতে ইস্তফা দেন। এর পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অত্র জামিয়ায় সিনিয়র মুহাদ্দিস হিসাবে কর্মরত থেকে সহীহ মুসলিমের দরস প্রদান করেছেন। ২০১৫ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত জামিয়া আরাবিয়া নতুনবাগে সহীহ বুখারীর দরস প্রদান করেছেন। এরপর অসুস্থতার কারণে কর্মপরিধি সীমিত করে শুধু মালিবাগ জামিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট থেকেছেন। *** বিভিন্ন শাখায় অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারী এই আলোকিত হৃদয়ের মানুষটি হাজারো হৃদয়ে সহীহ ফিকিরের বীজ বপন করেছেন। অনেক ছাত্রকে ভাষা-সাহিত্য, রচনা ও বক্তৃতা, চিন্তা ও গবেষণা, দাওয়াত ও তাবলিগের জন্য তৈরি করে গেছেন। সাধারণ মানুষ ও বিশেষভাবে তালেবানে উলূমে নবুওয়াতের কাছে আজীবন কুরআন ও হাদীসের আলো বিতরণ করে গেছেন। তাঁর দরসসগুলো হতো চিত্তাকর্ষক। বাচনভঙ্গি ছিল সহজতম। পাঠদান পদ্ধতি ছিল গোছালো। বোঝানো-সমঝানোর বিস্ময়কর দক্ষতা, মুগ্ধকর সূক্ষ্মানুধাবন, পঠিতব্য বিষয়ের উপর সুবিন্যস্ত ও সুস্পষ্ট বক্তব্য, সর্বোপরি সংক্ষিপ্ত ও সচেতন নির্দেশনা ও ঘুমন্ত প্রতিভাগুলোকে জাগ্রত করার প্রয়াস ছিল তাঁর দরসের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তালিবে ইলমগণ যেহেতু আগামী পৃথিবীর সভ্যতার রাহবার, আগত দিনের আদর্শের পথিকৃৎ, অপরদিকে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলায় মানুষের চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা, সংস্কৃতি, সভ্যতা সবকিছুই, নব উদ্ভূত সমস্যার সমাধান ও মানুষের প্রশ্নসমূহের বস্তুনিষ্ঠ উত্তরদান, দায়ীয়ানা যিম্মাদারী পূর্ণাঙ্গ এবং বলিষ্ঠভাবে পালন করার জন্য যোগ্য করে গড়ে তুলতে তিনি দরসেও জীবন-জগৎ, বর্তমান-ভবিষ্যত, বিবর্তিত সমাজ-সভ্যতা, সমস্যাসংকুল পৃথিবী, প্রচলিত শিক্ষা-সংস্কৃতি, রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার অসারতা ও নৈতিক অবক্ষয় ও আদর্শিক বিপর্যয় থেকে উম্মাহকে রক্ষা করার নির্ভুল কর্মধারা সম্পর্কে সময়োপযোগী আলোচনা করতেন, নির্দেশনা দিতেন। *** তিনি বিগত পনের বছর ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ’ (বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড)-এর সহকারী মহাসচিব পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বেফাকসহ জাতীয় প্রয়োজনে নিজস্ব কাজকে তুচ্ছ মনে করা তাঁর সভাবজাত বিষয় ছিল। সময়ের এ ক্রান্তিকালে বেফাকসহ যে কোনো জাতীয় সমস্যা সমাধানে তিনি ছুটে গিয়েছেন, সংকট সমাধানে বড়দের অংশীদার হয়েছেন। বেফাকের সুনাম-সুখ্যাতি, উন্নতি-অগ্রতির নেপথ্যে তাঁর অবদানকে অস্বীকার করা যাবে না। বিদগ্ধ আলেমেদ্বীন হযরাতুল আল্লাম মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমী দা. বা. জানাযার পূর্ব মুহূর্তে এভাবে তাঁর অভিব্যক্তি পেশ করলেন- ‘ফরিদাবাদ মাদরাসায় যারা মেধাসম্পন্ন ছাত্র ছিল তাদের মাঝে মাওলানা আবুল ফাতাহ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেই সুবাদে তাঁর সাথে পরিচয়। আমরা যখন মালিবাগ জামিয়ায় শিক্ষকতা শুরু করি তখন মাওলানা আবুল ফাতাহ ও মাওলানা ইসহাকসহ সাতজন ছাত্র মালিবাগে দাওরায়ে হাদীসে ভর্তি হয়। মাওলানা আবুল ফাতাহ ও মাওলানা ইসহাক ফরিদাবাদেও একসাথে পড়েছে। দুজনের মাঝে সম্পর্ক ছিল বড় গভীর। মাওলানা আবুল ফাতাহ বহু গুণের অধিকারী ছিলেন। একদিকে জন্মগতভাবে তীক্ষ্ম মেধার অধিকারী। সাথে সাথে ছিলেন দক্ষ ব্যবস্থাপক। লেখক ছিলেন, সামাজিক ছিলেন, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। বেফাকুল মাদারিসকে জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ার ক্ষেত্রে যাদের অবদান রয়েছে, তাঁদের মধ্যে মাওলানা আবুল ফাতাহ সাহেবের দৃঢ় অবদান অনস্বীকার্য। লেখা-লেখির যে কোনো প্রয়োজন হয়েছে মাওলানা আবুল ফাতাহ তা তৈরি করে দিয়েছেন। সকালে রাত্রে যখন যা বলা হয়েছে সাথে সাথে প্রস্তুত করে দিয়েছেন। তাঁর এই অবদান ভোলার মত নয়। লেখনীর জগতে বহু মৌলিক বই লিখে গেছেন। [অর্থনীতির উপরে (‘ইসলামী অর্থনীতির আধুনিক রূপায়ণ’, (বেফাকুল মাদারিসের অধীনে ফযীলত ১ম বর্ষে পাঠ্য), রাষ্ট্র বিজ্ঞানের উপরে ‘আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইসলাম’, সমাজবিজ্ঞানের উপরে বহু মূল্যবান গ্রন্থ লিখে গেছেন। ‘হাদীস অধ্যয়নের মূলনীতি’, ‘দারুল উলূম দেওবন্দ : ইতিহাস ঐতিহ্য ও অবদান’, (ফযীলত ২য় বর্ষে পাঠ্য), ‘স্রষ্টা ও তাঁর স্বরূপ সন্ধানে’, ‘ইসলামের দৃষ্টিতে পীর-মুরিদী’, ‘মুজাহাদা ফী সাবীলিল্লাহ’। ‘জেগে উঠো হে ঘুমন্ত শতাব্দী’ এই কিতাবটি তাঁর সৃজনশীল কাব্যগ্রন্থ, যাতে তিনি ঘুমন্ত জাতিকে জেগে উঠার দরদী আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়াও প্রকাশের পথে তাঁর সর্বশেষ গ্রন্থ ‘ইসলাম ও সমাজ ব্যবস্থা’, যা দ্বারা পাঠকবৃন্দ বিশেষ নির্দেশনা পাবেন ও ব্যাপক উপকৃত হবেন বলেই আশা রাখি। আরো অনেক মূল্যবান গ্রন্থ রচনা ও অনুবাদ করে গিয়েছেন। বলতে গেলে তাঁর সবগুলো গ্রন্থই গবেষণাধর্মী ও তথ্যবহুল।] আল্লাহ পাক তাঁকে জান্নাতের আ‘লা মাকাম দান করুন এবং জীবনে ভুলত্রুটি যা হয়েছে আল্লাহ পাক তা ক্ষমা করে দিন- আমীন। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার সহকারী মহাসচিব, জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়্যাহ-এর মুহতামিম হযরত মাওলানা মাহফুযুল হক ছাহেব দা. বা. এভাবে তাঁর অভিব্যক্তি পেশ করেন- ‘মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহম্মাদ ইয়াহইয়া রাহ. প্রায় দুই বছর যাবৎ আমাদের মাঝে না থেকেও ছিলেন এবং থাকবেন। ২০০৫-২০১৫ পর্যন্ত প্রায় এগারটি বছর বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ায় দুজন কাছাকাছি থেকে বেফাকের সুখে দুখে, কঠিন পরিস্থিতিতে একসাথে কাজ করার আল্লাহ তাআলা সুযোগ দিয়েছিলেন। সেই হিসাবে বলতে পারি যে, যোগ্য ব্যক্তি, চতুর্দিক সম্পর্কে সতর্ক আবার কর্মঠ, এটা এই যামানায় নাই বললেই চলে। মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহম্মাদ ইয়াহইয়া রাহ.-এর মাঝে আল্লাহ তাআলা এই তিন গুণের সমাহার ঘটিয়ে ছিলেন- যোগ্যতার কোনো কমতি ছিল না, চতুর্দিক সম্পর্কে খুবই সচেতন এবং সতর্ক ছিলেন এবং অত্যন্ত কর্মঠও ছিলেন। যথেষ্ট বয়স, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত থেকেও বেফাকুল মাদারিসের যে কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে কী করা দরকার এবং তার অগ্রগতির জন্য কী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন- শত ব্যস্ততার মধ্যেও এজাতীয় বিষয়কে সবসময় প্রাধান্য দিতে দেখেছি। বিগত দুই বছর বেফাক আরো কঠিন পরিস্থিতি পার করেছে। প্রতিটি পদে পদে, প্রতিটি মুহূর্তে মুরুব্বিয়ানে কেরামসহ বেফাকের সকলের মধ্যেই মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া রাহ.-এর কর্মস্থলে অনুপস্থিতির শূন্যতা অনুভূত হয়েছে। আজ তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তবে এমন অনেক কিছু করে গেছেন, এমন কিছু রেখে গেছেন, যা তাঁকে স্মরণীয় করে রাখবে। তাই যারা তরুণ প্রজন্ম, জাতির ভবিষ্যৎ, আমরা এসকল মুরুব্বিয়ানে কেরাম থেকে তাদের এ গুণগুলো অর্জন করার ব্যাপারে সচেষ্ট হব- আমীন। তাঁর ছাত্রবন্ধু এবং দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বিদগ্ধ আলেমেদ্বীন, জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়ার নায়েবে মুহতামিম হযরত মাওলানা আব্দুল গাফ্ফার দা. বা. বলেছেন- তাঁর কাছে কিতাব পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে, তিনি আমার উস্তায, উস্তাযে মুহতারাম। তাঁর সম্পর্কে বললে তো অনেক কিছুই বলা যায়, তবে এই মুহূর্তে যেটা সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে এবং বারবার মনে পড়ছে এবং এটা আমি বারবার বলেছিও, সোশ্যল মিডিয়াতেও লিখেছি, সেটা হচ্ছে যে, তিনি একজন সজ্জন, ভদ্র এবং ভালো মানুষ ছিলেন। অত্যন্ত শরীফ মানুষ ছিলেন, অত্যন্ত ভদ্র মানুষ ছিলেন। ভদ্রতা তাঁর স্বভাবজাত ছিল, মজ্জাগত ছিল। বিভিন্ন কার্যক্রম উপলক্ষে মজলিসে বসতে হয়েছে, মিটিং করতে হয়েছে, কথা কাটাকাটি হয়েছে, মতবিরোধ হয়েছে, রাগ করেও কথা বলেছি। কিন্তু আমি ভদ্রতার সীমানা লঙ্ঘন করলেও হুযুরকে কখনো দেখিনি ভদ্রতার সীমানা লঙ্ঘন করতে। এই গুণগুলোর অভাব আছে আমাদের অনেকের ভেতরে, আমার নিজের ভেতরেও। আল্লাহ তাআলা তাঁকে জান্নাতের আ‘লা মাকাম দান করুন- আমীন। *** মা-বাবার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা-ভক্তি, তাঁদের প্রতি ভালবাসা, তাঁদের খেদমত করা, প্রয়োজনে তাদের জন্য সবকিছু উজাড় করে দেওয়া এগুলো তাঁর স্বভাবজাত বিষয় ছিল। এ ক্ষেত্রে তাঁর স্ত্রীও ছিলেন তাঁর দরদী সহযোগী। তিনি মালিবাগ জামিয়ার নায়েবে মুহতামিম (ভাইস প্রিন্সিপাল), কর্মব্যস্ত মানুষ। মা তাঁর বাসায় অসুস্থ। মারাত্মক পেটের সমস্যা, জামা-কাপড়, বিছানার চাদর সব কিছুই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তিনি তা পরিষ্কার করার জন্য স্ত্রীকে বলেননি, কাজের মহিলাকে বলেননি; নিজ হাতেই সবকিছু পরিষ্কার করেছেন। মা তা দেখে আনন্দিত হয়েছেন, দুআ করেছেন। সেদিন বিকালবেলা আমি অসুস্থ মাকে দেখতে গেলে বারবার তিনি এ কথাটাই আমাকে বলছিলেন। বাবা হযররত মাওলানা মিয়া হুসাইন রাহ. ইন্তেকাল করেছেন ১৯৮৮ সালে। বাবা ইন্তেকালের কিছুদিন পূর্বে তাঁর বড় সন্তান আবুল ফাতাহকে নির্জনে ডেকে নিয়ে বলেছিলেন, আমার সময় মনে হয় শেষ হয়ে আসছে। ছোট সন্তানদের সবকিছুর দায়িত্ব তোমার কাছে দিয়ে গেলাম। তুমি তাদের দেখা-শোনা করবে, পড়া-লেখা করাবে, তাদেরকে মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেছেন যথাযথভাবে। সকল ভাইদেরকে বাবার মতো স্নেহ-মমতা দিয়ে তত্ত্বাবধান করেছেন, নিজের অর্থ দিয়ে পড়া-লেখার ব্যবস্থা করেছেন। আদর, স্নেহ, মমতা দিয়ে পিতা হারানো কষ্টকে লাঘব করেছেন। জীবনের শেষ দিনগুলোতে এসে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন, তবুও তিনি ফোন করে হলেও ভাই বোনদের, আত্মীয়-স্বজনদের খবর নিয়েছেন। তাদের আনন্দে আনন্দিত হয়েছেন, তাদের কষ্টে কষ্ট পেয়েছেন। তাঁর ভাইদের (হাফেজ বদরুল ইসলাম, মুফতী শামছুল ইসলাম রহ., মুফতী তৈয়্যব হুসাইন, মাওলানা তাহের, ড. তাজুল ইসলাম, মাওলানা নজরুল ইসলাম ও ফখরুল ইসলাম) গড়া ও প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মাওলানা আবুল ফাতাহ রাহ.-এর অবদান বাবার মতোই। *** তাঁর তিন ছেলে তিন মেয়ে। ইন্তেকালের অনুমানিক ২৫-৩০দিন পূর্বে আমি ও ভাই মাওলানা নজরুল ইসলামের সামনে বলেছিলেন, আমার অবর্তমানে আমার সন্তানদের তোমাদের কাছে রেখে গেলাম। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে থাকার তাওফিক দান করুন এবং দুনিয়া ও আখেরাতে তাদেরকে ভরপুর সফলতা দান করুন। ২৪ শাবান, ১৪৩৮ হি. = ২০ মে, ২০১৭ ঈ. তারিখে ইশার নামাযের পর রাত ১০ ঘটিকায় হাজার হাজার উলামা-তুলাবার উপস্থিতিতে মালিবাগ জামিয়ায় তাঁর জানাযার নামায আদায় করা হয়। নামাযের ইমামতি করেন তাঁর দরদী উস্তায, দেশ বরেণ্য আলেমেদ্বীন হযরত মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমী দা. বা.। পরের দিন ২৫ শাবান ১৪৩৮ হি. গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। আল্লাহ তাআলা তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসের আ‘লা মাকাম দান
Publisher Info
- Reviews (0)
Reviews
There are no reviews yet.