অন্দরমহল
Printed Price: TK. 650
Sell Price: TK. 520
20% Discount, Save Money 130 TK.
Summary: 'বইয়ের চেয়ে বড় বন্ধু আর নেই' - কথাটার তাৎপর্য হয়ত অনেকেই উপলব্ধি করেন। অনেকেই এক জীবনে একাধিক বই পড়েন। কিছু বইয়ের কথা চলে যায় বিস্মৃতির অতলে আর কিছু লেখার রেশ
Read More... Book Description
‘বইয়ের চেয়ে বড় বন্ধু আর নেই’ – কথাটার তাৎপর্য হয়ত অনেকেই উপলব্ধি করেন। অনেকেই এক জীবনে একাধিক বই পড়েন। কিছু বইয়ের কথা চলে যায় বিস্মৃতির অতলে আর কিছু লেখার রেশ মন ধরে রাখে সারাজীবন জুড়ে। হয়ত সেসব লেখা তার মন এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয়, হয়ত বা নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায় সে লেখায়, হয়ত বা অজানা কোনো রত্নের সন্ধান পায় সেই লেখা থেকে অথবা, সেই লেখা খোঁজ দিয়ে যায় মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক অন্দরমহলের। এই অন্দরমহলের খোঁজ কতজন রাখি? বেশিরভাগ মানবজনমই কেটে যায় মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা এই অন্দরমহলের খোঁজে।
“মানুষ তোর মানস ধন রইল পড়ে, তুই তবু কোন ধন খুঁজিস?
সোনা-দানায় কি ধন থাকে, যদি বা তুই মন বুঝিস!
যে সুখের খোঁজে তুই ধন কাড়িলি, সেই সুখখানি তোর কোথা রয়,
মনের মাঝেই সুখের বসত, তবু সেই মনখানা তোর আড়াল রয়।
জগত যে এক ভ্রমের নগর, সেই নগরে অন্ধ সকল,
ইঁটের ভেতর মহল খোঁজে, আসল তো মন, অন্দরমহল।”
আমার পড়াশোনা বা জানার জগতটা খুবই সীমিত। সেই সীমাবদ্ধতা ওপার বাংলার সাহিত্য ভান্ডারের খোঁজ তেমন রাখত না। সাদাত হোসাইনের নামও আগে শুনিনি। প্রথম শুনলাম এ বছর নন্দন চত্বরে বাংলাদেশ বইমেলা চলাকালীন অভিষেক আইচদার পোস্ট দেখে। সেই পোস্টেই আরো জানলাম ওনার বই নিলাম হয়েছে একলাখ টাকায়। কৌতুহল জন্মালো। বাংলাদেশের মূল্যস্তর সম্বন্ধে বিশেষ অবহিত নই। কিন্তু এপার বাংলার মূল্যস্তরে সদ্য প্রকাশিত কোনো বাংলা বই একলাখ টাকায় নিলাম হচ্ছে – ভাবনাটাই কিরম যেন কষ্টসাধ্য। ইতিমধ্যে ‘অন্দরমহল’ এবং ‘আরশিনগর’ এই দুটি বই নিয়ে অনেকের উচ্ছ্বাস চোখে পড়ল। প্রবল কৌতুহল হল বইদুটি সম্পর্কে জানার। অবশেষে বইমেলার শেষ দিনে বই দুটি সংগ্রহে এল। সাদাতের সাথে আলাপও হল এবং সদাহাস্যময় মানুষটি বার বার বললেন আগে ‘আরশিনগর’ পড়ে তারপর ‘অন্দরমহল’ পড়ার কথা।
ওনার কথা শুনে কিছুদিন আগেই শেষ করেছিলাম ‘আরশিনগর’। বেশ ভালো লেগেছিল। লেখক মনের সমস্ত মাধুরী মিশিয়ে তিলে তিলে তৈরি করেছিলেন আরশিকে। আরশি লেখকের মানসপ্রতিমা। অসাধারণ মায়াময়ী। পাঠক অন্য কোনো দিকে না তাকিয়ে আরশির কাজল চোখে ‘বিবশ হয়ে চেয়ে’ পড়ে ফেলতে পারে উপন্যাসটি। আরশিনগর আসলে এক ভাবালুতার জগৎ। এক অদৃশ্য জাদু বাস্তবতা ছুঁয়ে ছিল উপন্যাসটিকে। কিন্তু তারপরও সেই উপন্যাসের গতি কোথাও কোথাও শ্লথ লেগেছিল। মনে হয়েছিল লেখক – পাঠক দু তরফেই আবেগের ঘনঘটার কিঞ্চিৎ বাহুল্য প্রকাশ পেয়েছে।
এরপর শুরু করলাম ‘অন্দরমহল’। অনেকদিন ধরে বেশ কিছু বই রিভিউ করার দৌলতে বুঝেছি স্বতঃস্ফূর্ত রিভিউ নির্ভর করে অবশ্যই লেখকের দক্ষতার উপর, তাঁর লেখনী কতটা এফোঁড় – ওফোঁড় করছে মানব মনকে – তার উপর, মানবমনের অন্দরমহলের কথা কতটা উন্মোচিত হচ্ছে তার লেখনীতে তার উপর। কিছু কিছু লেখার রিভিউ করার মত ভাষার জোর আমার মত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সমালোচককে ভগবান দেননি। সাদাতের ‘অন্দরমহল’ এই জাতের লেখা। অনবদ্য, অসাধারণ – আমার শব্দভান্ডার এ মহাকাব্যিক উপন্যাসের অসাধারণত্ব বর্ণনা করতে অক্ষম।
একাধিক প্লট, সাবপ্লট, অনেক অনেক চরিত্রের ভিড়, কিন্তু কখনোই উপন্যাসের খেই হারিয়ে যায়নি। বরং প্রতি চরিত্র, তা ছোট – বড় যাই হোক, পেয়েছে পূর্ণ মর্যাদা ও পরিণতি। কয়েক পাতা জুড়ে এক-একটি অধ্যায়। অধ্যায়ের শেষ চরিত্রগুলির পরিণতি জানার অদম্য কৌতুহল বাড়িয়ে দেয়। এক একটি চরিত্রের সাথে জড়িয়ে থাকে এক একধরণের জীবনবোধ, তা যেমন কখনো হিংসার, দ্বেষের কখনো অজানার সন্ধানের, কখনো ভালোবাসার, কখনো অচেনা পথের পথিক সেই জীবনবোধ। কে জানে কখন যেন পাঠকও সন্ধান পেয়ে যান নিজেদের অন্দরমহলের। লেখকের সার্থকতা এটাই।
এ উপন্যাসের ঘটনাস্থল গঙ্গাবতী নদীর পাড়ে বিষ্ণুপুরে জমিদারবাড়ি গঙ্গামহলের ক্ষমতার অধিকার নিয়ে। বিশদে কিছু বললাম না। পাঠকরা নিজেরাই এই জমিদারীর অন্দরমহলে প্রবেশ করে খুঁজে নিন নিজেদের বুকের ভেতরে থাকা অন্দরমহলকে।
এ উপন্যাস পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল ক্লাসিক যুগের কোনো লেখকের লেখা পড়ছি। বিশ্বাস করুন একদম বাড়িয়ে বলছি না। এত অল্প বয়সে এরম পরিণত লেখা লিখলেন কি করে সাদাত? আপনি সত্যিই বিস্ময়! গঙ্গামহলের অন্দরমহলে ঢুকতে ঢুকতে বার বার মনে হচ্ছিল একলাখ নয়, পার্থিব জগতের কোনো মূল্যই বোধহয় এ বইয়ের মূল্য নির্ধারণে অপারগ। আরো লিখুন সাদাত। আগামী দিনে আপনার থেকে মানবমনের অন্দরমহলের মণি মুক্তের সন্ধান আরো বেশি করে পাব সেই আশায় রইলাম।
Reviews
There are no reviews yet.